বিজিবিকে শ্রমিকরা টাকা দিয়েছি তাহলে নৌকা ডুবালেন কেনো!
নিজস্ব প্রতিবেদক:: সাদা পাথরখ্যাত সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ বাংকারে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্যদের উপর হামলা চালিয়েছে পাথর শ্রমিকরা।
মূলত বিজিবি কর্তৃক পাথর বুঝাই নৌকা পানিতে ডুবানোকে কেন্দ্র করে গত মঙ্গলবার দুপুরে এই ঘটনা ঘটে। এ সময় উত্তেজিত শ্রমিকরা নৌকার টাকার জন্য বিজিবির ৩ সদস্যকে বেশ কিছুক্ষণ সেখানে আটক করে রাখে।
কারও হাতে বেলচা, কারও হাতে কোদাল, কারও হাতে শাবল। সবাই অবৈধভাবে মাটি খুঁড়ে বের করছেন পাথর। পাথরগুলো টুকরিতে করে নদীর পাড়ে জড়ো করছেন শ্রমিক। কয়েক শ বারকি নৌকাওয়ালা সেসব স্তুুপকৃত পাথর দরদাম করে কিনে নিচ্ছেন। এটা হচ্ছে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ রোপওয়ের (রজ্জুপথ) সংরক্ষিত বাংকার এলাকার প্রতিদিনকার চিত্র।
গত ৫ই আগস্ট ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে প্রকাশ্যে পাথর লুটপাট চললেও স্থানীয় প্রশাসন রহস্য জনকভাবে নির্বিকার। স্থানীয়দের ধারণা, গত ছয় মাসে অন্তত ২০০ কোটি টাকার পাথর লুটপাট হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে গত ২৫শে নভেম্বর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় আলোচনা হয়। সেখানে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ তোলা হয় বিবিজি সদস্যদের উপর।
অথচ স্থানীয়া বলছেন পুলিশও এর দায় এড়াতে পারেনা। তাদেরকে বড় অংকের টাকা দিয়ে ম্যানেজ করেই চলে পাথর ও বালি খেঁকোদের অবৈধ বালি-পাথর উত্তোলনের ব্যবসা। প্রশাসনের সকল বাহিনীর নামে দৈনিক বখরা আদায় করা হয় বলে বিশ্বস্থ একটি সুত্রে জানা যায়।
পরবর্তী সময়ে গত ৫ই ডিসেম্বর সিলেট জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় উন্মুক্ত আলোচনা করতে আসলে, সে উন্মুক্ত আলোচনায়ও পাথর লুটপাট এবং চাঁদাবাজি হচ্ছে মর্মে উপস্থিত অনেকে অভিযোগ তুলেন।
গত ৭ই জানুয়ারি উপজেলার নারাইনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যায় মাঠে এলাকাবাসীর সাথে সিলেট ব্যাটালিয়ন (৪৮ বিজিবি)-এর মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
মতবিনিময় সভায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত কালাইরাগ গ্রামের একজন ছাত্র অভিযোগ করে বলেন, বিজিবি বাংকারের প্রতিটি নৌকা থেকে দৈনিক ৫’শ টাকা নিয়ে পাথর লুটপাট করাচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, ৫’শ টাকা ধীরে ধীরে কমে এখন ২’শ টাকায় এসেছে। চাঁদাবাজিতে পিচ্চি কামালের সাথে যোগ হয়েছেন করিম, নাজিম ও দুলাল। গত ৫ই আগষ্টের আগে বাংকারে ১৪৪ ধারা জারি ছিল। আরএনবি’র পাশাপাশি বিজিবি সদস্যরাও বাংকার থেকে পাথর উত্তোলন করতে দিত না। অথচ সরকার পরিবর্তনের পর চলছে হরিলুট। বর্তমানে বিজিবি, আরএনবি, পুলিশ, আনসার, এসিল্যান্ডের নামে টাকা আদায় হচ্ছে অভিযোগ রয়েছে।
নৌকা আমার এখানে পাথর লোড করেছি। আমার নৌকা কেন পানিতে ডুবালেন। এ বিষয়টির একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওতে দেখা যায় কয়েকজন শ্রমিক বিজিবির ৩ জন সদস্যকে বাংকার এলাকা থেকে যেতে দিচ্ছেন না। শ্রমিকরা বলছেন আপনাদেরকে টাকা দিয়েছি তাহলে আমাদের নৌকা কেন পানিতে ডুবালেন।
বিজিবি কালাসাদেক কোম্পানি কমান্ডার সাংবাদিকদের জানান, বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ দেখতেছেন।
বিজিবিই উপর হামলার বিষয়ে জানতে মুঠোফোনে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আজিজুন্নাহার সময় টিভি বাংলাকে পাথর লুটপাটের বিষয়টি স্বীকার করেন।
তিনি বলেন, নিয়মিত অভিযান চালিয়েও লুটপাট ঠেকানো যাচ্ছে না। অভিযান চালাতে গেলে লুটপাটকারীরা সরে যায়। চলে এলে আবার পাথর উত্তোলন শুরু করে দেয়। আরএনবি এবং আনসারের নামে বখরা আদায় বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি সময় টিভি বাংলাকে বলেন আরএনবির উপর আমি কিঋু করতে পারিনা, তবে ঐ বাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করা হয়েছে। আনসারদের উপরও ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বাংলাদেশ রেলওয়ের একমাত্র রজ্জুপথটি দেশের সবচেয়ে বড় পাথরকোয়ারি ভোলাগঞ্জের পাশে অবস্থিত। রোপওয়ে এলাকাটি সংরক্ষিত বাংকার হিসেবে পরিচিত।
১৯৬৪ সালে ভোলাগঞ্জ থেকে সুনামগঞ্জের ছাতকে পাথর পরিবহনে স্থল কিংবা জলযানের বিকল্প হিসেবে রজ্জুপথ স্থাপন করা হয়। ১১৯টি খুঁটির মাধ্যমে তৈরি হয় রোপলাইন।
ভোলাগঞ্জের রোপওয়ে এলাকাটি ৩৫৯ একর জায়গাজুড়ে অবস্থিত। এখানকার সামান্য উঁচু টিলার মতো ভূমি আর সমতল স্থানের নিচে আছে ছোট-বড় অসংখ্য পাথর সমৃদ্ধ জোন।
গত সাত মাসে কী পরিমাণ পাথর লুট হয়েছে, এর কোনো পরিসংখ্যান স্থানীয় প্রশাসনের কাছে নেই। তবে স্থানীয় লোকজন বলছেন, কমপক্ষে ২০০ কোটি টাকার পাথর বাংকার এলাকা থেকে লুটপাট হয়েছে।
এভাবে লুটপাট চলতে থাকলে কিছুদিনের মধ্যে পুরো বাংকার এলাকা পাথরশূন্য হয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এ বিষয়ে কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ( ওসি ) উজায়ের আল মাহমুদ আদনানের মুঠোফনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেন নি। পরে একই থানার ওসি তদন্তের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি সময় টিভি বাংলাকে বলেন বিজিবির উপর হামলার বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারবোনা স্যারকে জিজ্ঞাসা করেন। ওসি সাহেবতু সাংবাদিকদের ফোন রিসিভ করেননা, তখন তিনি বলেন স্যার সিলেট আছেন বিকালে ফোন দিয়েন। সন্ধ্যায় ওসি সাহেব কোম্পানীগঞ্জ পৌছালে এই প্রতিবেদককে ওসি তদন্ত কোম্পানীগঞ্জ ফোন দিয়ে বলেন স্যার আসছে এখন ফোন দেন। এরপর আরো তিনবার ফোন করলেও ওসি উজায়ের আল মাহমুদ আদনান
ফোন রিসিভ করেননি বা রির্টান কল বেক করেননি। এখানেই বুঝা যায় উনি সাধারণ মানুষকে কি সেবা দিচ্ছেন।
তবে স্থানীয় প্রশাসনের নির্লিপ্ততা ও ঘোষ বানিজ্যোর কারণে বাংকার এলাকায় লুটপাট বন্ধ করা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) সিলেট বিভাগের সমন্বয়ক শাহ সাহেদা আখতার।
তিনি বলেন, হাজার হাজার মানুষ সরকারি হেফাজতে থাকা জায়গার পাথর প্রকাশ্যে লুটপাট করছে। প্রশাসন ঠেকাতে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। উল্টো প্রশাসনের বিরুদ্ধে উৎকোচ গ্রহনের অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে ।
আগামী প্রতিবেদনে থাকবে কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসির লাগামহীন দূর্ণীতির খবর।চোখ রাখুন সময় টিভি বাংলায়। চলবে