মোঃ রাজন আহমদ,বালাগঞ্জ প্রতিনিধি:: সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বালাগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মতিনের নেতৃত্বে জনসম্মুখে প্রকাশ্যে কাঠমিস্ত্রি সুহেলকে হত্যা করলেও বিচার আজও হয়নি। সুহেল হত্যার দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও পরিবারে কান্না এখনও থামছে না। সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম স্বামী সুহেলকে হারিয়ে স্ত্রী হ্যাপি বেগমের সংসারের চাকা গুড়ছে না। অবুঝ দুটি সন্তান নিয়ে চরম কষ্টে দিন পার করছেন তিনি।
নিহতের পরিবার ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়,সিলেটের বালাগঞ্জ সদর ইউনিয়নের চাঁনপুর গ্রামের জবান উল্যার ছেলে কাঠমিস্ত্রি সুহেল মিয়াার বালাগঞ্জ বাজারের আকবর কমিউনিটি সেন্টারের পেছনে জমিটির মালিক। দলীয় প্রভাবে দীর্ঘদিন ধরে ওই জমিটি জোরপূর্বক দখলের চেষ্টা করে আসছিলেন একই গ্রামের সৈয়দ উল্যার ছেলে বালাগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বালাগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন ও তার সহযোগীরা। নিজের মালিকাধাীন জায়গা দখলে দিনমজুর কাঠমিস্ত্রি সুহেল বাধা দেন। এতে তার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে দখলকারীরা।
২০২৩ সালের ৩০ জুলাই কাঠমিস্ত্রি সুহেল কাজ শেষে প্রতিদিনের মতো বিকেলে বালাগঞ্জ বাজারে যান। কোন কিছু বুঝার আগেই পিছন দিক থেকে উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বালাগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মতিনের নেতৃত্বে ৫/৭ জনের একটি দল দেশীয় অস্ত্র দিয়ে বালাগঞ্জ বাজারে জনসম্মুখে প্রকাশ্যে কাঠমিস্ত্রি সুহেলের উপর অতর্কিত হামলা করেন। ঘটনাস্থলে থাকা লোকজন সুহেলকে রক্ষার চেষ্টা করেন। সন্ত্রাসীদের অতর্কিত হামলার পর চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়ার চেষ্টা করলে হামলাকারীরা বাধা দেয়। পরে সুহেলের শারীরিক অবস্থা অবনতি হলে জনতার মাধ্যমে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৯ আগস্ট রাতে সুহেল মারা যায়। লাশ বাড়িতে নিয়ে আসার পর আরও নিষ্ঠুর ঘটনা ঘটে। হামলাকারীরা ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ দাফনের চেষ্টা চালায়। পরে জরুরি আইনি সেবা ৯৯৯-এ কল দিলে বালাগঞ্জ থানা পুলিশ এসে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ সিলেট এম এজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। এই ঘটনায় সুহেলের স্ত্রী হ্যাপি বেগম বাদি হয়ে বালাগঞ্জ থানায় মামলা করতে গেলে থানা পুলিশ মামলা গ্রহণে অপারগতা প্রকাশ করে। নিরুপায় হয়ে ১৪ আগস্ট সিলেট আদালতে মামলা করেন তিনি।
মামলায় বালাগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বালাগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন, তার ভাই তুরণ মিয়া, চানপুর গ্রামের কদর উল্যার ছেলে বালাগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি একে টুটুল, বালাগঞ্জ উপজেলার নতুন সুনামপুর গ্রামের ইকবাল মিয়ার ছেলে ছাত্রলীগ নেতা শাহরিয়ার রাহীসহ অজ্ঞাতনামা আরো কয়েকজনকে অভিযুক্ত করা হয়। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে নথিভুক্ত করেন। পাশাপাশি তদন্ত করে নিয়মিত মামলা হিসেবে রুজু করার জন্য বালাগঞ্জ থানা পুলিশকে নির্দেশ দেন। তখন বাদী পক্ষের আইনজীবী সিলেট জজ কোর্টের অ্যাডভোকেট সাব্বির আহমদ বলেছিলেন আসামি গ্রেপ্তার ও মামলার অগ্রগতি না করায় বালাগঞ্জ থানার সাবেক ওসিসহ থানা পুলিশের বিরুদ্ধে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিকট লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন মামলার বাদি হ্যাপী বেগম। ফাইনাল রিপোর্ট দেওয়ার আগে অভিযুক্ত তিন জন আদালত থেকে ৬ সপ্তাহের জামিন নেওয়ার পর জামিনের সময়সীমা শেষ হওয়ায় সংশ্লিষ্ট আদালতে আত্মসমর্পণ করলে আদালতে তাদের জামিন না মঞ্জুর করে জেল হাজতে পাঠালেও দলীয় প্রভাবে অল্প দিনেই জামিন পেয়ে যান খুনিরা। কাঠমিস্ত্রি সুহেলের ভাই হারুন আহমদ একই পেশায় কাজ করেন, তিনি জানান আসামীরা জামিন পেয়ে মামলা তুলে নিতে তাদের চাপ প্রয়োগ করছেন। এমনকি মামলার বাদি সুহেলর স্ত্রী হ্যাপী বেগমকে তার অজান্তে ম্যানেজ করে জোরপূর্বক আদালতে নিয়ে মামলাটি খারিজ করা হয়েছে উল্লেখ করেন। এই অবস্থায় মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হারুন আহমদ অনেকটা আক্ষেপ করে বলেন, আসামিরা ভাইকে হত্যার পর থেকে মামলা দায়ের ও মামলা নিস্পত্তির বিষয়ে এতটা প্রভাব বিস্তার করছে যা আমার অসহায় পরিবারের পক্ষে ভাইয়ের ন্যায় বিচার প্রাপ্তির পরির্বতে মামলাটিই খারিজ করে দিয়েছে।
এদিকে দলীয় প্রভাবে আব্দুল মতিন ২০২১ সালের ২৮ শে মার্চ বালাগঞ্জের কাশিপুর ব্রিজে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় কর্মসূচি পালনে আলেম-উলামাদের একটি মিছিলে প্রকাশ্যে নির্বিচারে হামলার নেতৃত্বে দিয়েছিলেন। সেই হামলার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়লে সর্বত্র নিন্দার ঝড় উঠে।
এছাড়া উপজেলায় সরকারি জায়গা দখল করে স্থাপনা নির্মাণ,নিরপরাধ মানুষ হত্যা ও মসজিদ মাদরাসার টাকা দুর্নীতি করে কড়ি-কড়ি টাকার মালিক হয়েছেন। বালাগঞ্জ কেন্দ্রী জামে মসজিদের বর্তমান সহ-সভাপতি নজরুল ইসলাম মকদ্দছ জানান, আব্দুল মতিন সেই মসজিদের সাধারণ সম্পাদক দায়িত্ব পালনকালে মসজিদের উন্নয়ন কাজে সরকারি-বেসরকারিভাবে বিপুল অনুদান আসে। সিলেট জেলা পরিষদের ৬ লক্ষ টাকা প্রয়াত সংসদ মাহমুদুস সামাদ চৌধুরীর ১ লাখ টাকা, পলাতক সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমানের সরকারি অনুদানের ১ লাখ টাকা সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দাল মিয়ার অনুদানের ১ লাখ টাকাসহ স্থানীয় ও প্রবাসীদের কাছ থেকে খয়রাতের প্রায় ৪ লাখ টাকাসহ মোট ১৫ লাখ টাকা দুর্নীতি করে মসজিদের হিসাব বিন্যাসে গড়মিল করেন।আব্দুল মতিন সেই টাকার কোন হাদিস না দিয়ে পাল্টা মসজিদ কমিটির কাছ থেকে পাওয়ানাদার হিসেবে ৭০ হাজার টাকা গ্রহণ করার অভিযোগ করেন।
প্রসঙ্গত: চলতি মাসের ১১ ফেব্রুয়ারি রাত ৯টার দিকে সিলেটের বালাগঞ্জে ডেভিল হান্টের অভিযানে জুলাই-আগস্ট হত্যা মামলায় বালাগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন গ্রেফতার হয়ে কারাগারে থাকলেও বাকিরা কারাগারের বাইরে রয়েছেন।
প্রকাশক: মিসেস মোর্শেদা হাসান, সম্পাদক : কল্লোল পাল সর্দার, প্রধান সম্পাদক : ইমরান হাসনাত জুম্মান(ইউকে প্রবাসী) ,
সহ-সম্পাদক: মো: আল-আমীন, বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: রাজা ম্যানশন, জিন্দাবাজার, সিলেট।, মোবাইল: ০১৬০৭৮৯৭৭৯৪
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত